জামালপুরে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার তালবীজ রোপণ

জামালপুরে পরিবেশের ভারসাম্য ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার তালবীজ রোপণ করেছে ‘তালবীজ রোপণ আন্দোলন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গত দুই মাসে জেলার মেলান্দহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক কিলোমিটার রাস্তার পাশে এসব তালবীজ রোপণ করে সংগঠনটি।

 

জামালপুরে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার তালবীজ রোপণ

জলবায়ুর পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত বৃক্ষ নিধনের কারণে দেশে ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাত বাড়ছে। প্রতি বছর বজ্রপাতে দেশে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে থাকে, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই তালগাছ। এসব বিষয় বিবেচনা করে তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত নেয় ‘তালবীজ রোপণ আন্দোলন’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক আবু হাসান মাহমুদ।

তালবীজ সহজলভ্য না হওয়ায় প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বীজ সংগ্রহের প্রচারণা করেন তিনি। পরে বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে বীজগুলো সংগ্রহ করে দলবদ্ধভাবে সেগুলো রাস্তার দু’পাশে রোপণ করা হয়।

স্থানীয় কৃষক আলতাফুর রহমান বলেন, তালবীজ রোপণ করলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হবে। কারণ আমরা মাঠে কাজ করি, গাছে নিচে বসে বিশ্রাম নিতে পারবো, মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাত থেকে রক্ষাও পাব। বাদশা নামে আরেক কৃষক জানান, তালগাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। তাল গাছ সহজে মারাও যায় না। গাছের নিচে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি ফলও খাওয়া যাবে।

সংগঠনটি গত দই মাসে মেলান্দহ পৌরসভার চাকদহ, চরপাড়া থেকে ভালুকা যাওয়ার রাস্তা, মেলান্দহ বাজার থেকে মাহমুদপুর যাওয়ার রাস্তা, ভালুকা থেকে তারাকান্দি যাওয়ার রাস্তা, দাগি থেকে টুপকার চর রাস্তা, মেলান্দহ রেল স্টেশনের জালালপুর থেকে চরবসন্ত যাওয়ার রাস্তা ও নাংলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নলকুড়ি যাওয়ার রাস্তাসহ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার দুই ধারে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার তাল বীজ রোপণ করেছে সংগঠনটি। প্রায় ৩০-৩৫ জন যুবক এই সংগঠনটির সঙ্গে তালবীজ রোপণের কাজ করছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য জাকিরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, তালগাছ গরু ও ছাগল খায় না। অন্যান্য গাছ রোপণ করলে গরু, ছাগল খেয়ে ফেলে। এই চিন্তা থেকে আমরা তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত নেই। এই তালগাছগুলো যখন বড় হবে তখন আমাদের কৃষক ও দেশের উপকার হবে।

সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক আবু হাসান মাহমুদ বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের কিছু করা দরকার তাই আমরা তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত নেই। তালগাছ অন্য গাছের তুলনায় বেশি উপকারী। এটা বজ্রপাত প্রতিরোধ করে মাটিতে পানির স্তর ধরে রাখে। প্রথমে আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বীজ সংগ্রহ করি। তারপর কোন কোন এলাকায় বীজ রোপণ করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তার দুই পাশে তালবীজ রোপণ করি।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আমাদের এই কার্যক্রম মেলান্দহ উপজেলা থেকে জেলা এবং জেলা থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পরবে আশা করি। একইসঙ্গে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে যাতে তালবীজসহ বিভিন্ন বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সবগুলো রাস্তায় তালবীজ রোপণ করা হবে। আগামী বছরও এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কথা জানান তিনি।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আলমগীর বলেন, তালবীজ বপনের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় কাজ করবে এটি। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করবে এই তালগাছ। তালবীজ রোপণে যেসব তরুণ ও যুবকেরা সম্পৃক্ত রয়েছে তারা মাদক, জুয়া, ইভটিজিং এবং কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয় থেকে তারা সুরক্ষা পাবে। তারা সুন্দর ও পরিবেশ বান্ধব মেলান্দহ উপহার দিতে পারবে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment